নদীয়া জেলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ

নদীয়া জেলার পূর্ব নাম নবদ্বীপ জেলা। এটি পশ্চিমবঙ্গের প্রেসিডেন্সি বিভাগের অন্যতম একটি জেলা। এই জেলের উত্তর দিকে রয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা আর পূর্ব দিকে বাংলাদেশের খুলনা বিভাগ। পশ্চিম দিকে রয়েছে হুগলি ও পূর্ব বর্ধমান জেলা।

আর দক্ষিণ দিকে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা। এটি একটি ঐতিহাসিক জেলা। এই জেলাকে নিয়ে বিভিন্ন ঘটনা ইতিহাসের পাতায় রয়েছে। সেই সম্পর্কে আজ আমরা কথা বলব।

নদীয়া জেলার ইতিহাস

নদীয়া জেলা ভাগীরথী নদীর তীরে অবস্থিত। নদীয়া জেলার নবদ্বীপ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে তীর্থস্থান। শোনা যায় রাজা বল্লাল সেন নদিয়া প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। রাজা বল্লাল সেন পরিবারের সাথে তীর্থ করার উদ্দেশ্যে ভাগীরথী নদীর তীরে আসতেন।

এখানেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন পঞ্চরত্ন মন্দির। এরপর ১৯২২ সাল নাগাদ ব্রিটিশ সরকার ভূমি জরিপ করার সময় খননকৃত একটি দীঘির অস্তিত্ব পায়। আপনারা শুনলে হয়তো অবাক হবেন নদীয়া জেলা একসময় বাংলার রাজধানী ছিল।

তবে মুসলিম সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী এই জেলা জয় করে নেন। পূর্বে তিব্বত, নেপাল ও ভুটানের সাথে নদীয়া জেলার বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। এই জেলার ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকালে এটি জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। আগে অবশ্য হুগলি ও উত্তর ২৪ পরগনার কিছু অংশ এই জেলার অন্তর্গত ছিল। ১৯৪৮ সালের ২৩ শে ফেব্রুয়ারি নদীয়া জেলা তার বর্তমান রূপটি লাভ করে। সেই সময় এই জেলার নামকরণ করা হয়েছিল নবদ্বীপ। পরে পরিবর্তন করে নদীয়া রাখা হয়। এই জেলায় গৌড়ীয় বৈষ্ণব আন্দোলনের প্রাণপুরুষ চৈতন্য মহাপ্রভু জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

নদীয়া জেলার অবস্থান

নদীয়া জেলা ভাগীরথী নদীর তীরে অবস্থিত। এই জেলা ২২° ৫৩’ ও ২৪° ১১’ উত্তর অক্ষাংশে আর ৮৮° ০৯ ও ৮৮° ৪৮ ‘ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। কর্কটক্রান্তি রেখা দ্বারা এই জেলা দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। এই রেখা পূর্ব দিকে মাজদিয়ার সামান্য উত্তর দিক দিয়ে পশ্চিমে চাপরা, নবীননগর, মধুপুর, কৃষ্ণনগরের উত্তরে অবস্থিত ঘূর্ণি, ঘূর্ণি গোডাউন, কালিদহ, পানি নালা, হরনগর, আনন্দ নগর, ভক্ত নগর ইত্যাদির উপর দিয়ে চলে গেছে।

এই কারণে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে ২ ডিগ্রি থেকে ৩ ডিগ্রি বেশি থাকে। আবার শীতকালে বেশ খানিকটা কম থাকে। এই জেলার উত্তরে রয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা আর দক্ষিণে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা। আবার পশ্চিম দিকে রয়েছে পূর্ব বর্ধমান আর হুগলি জেলা। পূর্ব দিকে বাংলাদেশের কুষ্টিয়া ও যশোর জেলা। এই জেলার আয়তন ৩ হাজার ৯২৭ বর্গ কিলোমিটার।

নদীয়া জেলার জনসংখ্যা

নদীয়া জেলায় সব থেকে বেশি হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ বসবাস করে। মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭২.১৫ শতাংশ মানুষই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। এছাড়াও ইসলাম ধর্মাবলম্বীর ২৬.৭৬ শতাংশ মানুষ এই জেলায় বসবাস করেন। আর ০.৬৫ শতাংশ খ্রিস্টান, ০.০২ শতাংশ মানুষ শিখ, ০.০১ শতাংশ মানুষ বৌদ্ধ, ০.০১ শতাংশ মানুষ জৈন ধর্মাবলম্বীর।

২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই জেলায় প্রায় ৫১ লাখ ৬৮ হাজার ৪৮৮ জন মানুষ বসবাস করেন। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১ হাজার ৩০০ জন মানুষ বসবাস করেন এই জেলায়। এই জেলার লিঙ্গানুপাত ৯৪৭ জন।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীইসলাম ধর্মাবলম্বীখ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীশিখ ধর্মাবলম্বীবৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীজৈন ধর্মাবলম্বী
৭২.১৫ শতাংশ ২৬.৭৬ শতাংশ ০.৬৫ শতাংশ ০.০২ শতাংশ ০.০১ শতাংশ ০.০১ শতাংশ

নদীয়া জেলার ভূপ্রকৃতি

গঙ্গা, ভাগীরথী আর অন্যান্য উপনদী দ্বারা গঠিত এই নদীয়া জেলা। বিশাল গাঙ্গেয় সমভূমির একটি অংশ হল এই জেলা। গঙ্গার পরিণত ব-দ্বীপের অন্তর্গত হলো এই জেলা। এই জেলার ভূমিরূপ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছে জলঙ্গী নদী ও চূর্ণী নদীর প্রবাহ। এই জেলার স্বাভাবিক ঢাল হল উত্তর-পূর্ব দিকে।

তবে বর্তমানে ভূমির ঢাল খুব কম। এই জেলায় ঝিল, নদী খাত জলাভূমি প্রচুর রয়েছে। জলঙ্গী নদী আর চূর্ণী নদীর প্রবাহপথ সর্পিল হওয়ার কারণে জায়গায় জায়গায় অনেক বিল সৃষ্টি করেছে। এই নদীগুলির প্রবাহ পথে ক্রমাগত পলি পড়ে। ফলে বর্ষার সময় এই জেলার বেশ কিছু জায়গায় বন্যা দেখা দেয়।

নদীয়া জেলার জলবায়ু

এই জেলার জলবায়ু উষ্ণ আর্দ্র ক্রান্তীয় মৌসুমী প্রকৃতির। এই জেলার মাঝখান দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা চলে যাওয়ার কারণে গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড গরম পড়ে। এই জেলায় মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত গ্রীষ্মকাল, জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বর্ষাকাল, অক্টোবর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত শরৎকাল আর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতকাল চলে।

এই যে গ্রীষ্মকালে সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা থাকে ৪৩° সেলসিয়াসের আশেপাশে আর সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা থাকে ১৯° সেলসিয়াসের আশেপাশে। অপরদিকে শীতকালে সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা থাকে ৩০° সেলসিয়াস এর আশেপাশে আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকে ৯° সেলসিয়াসের আশেপাশে। জেলার বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১ হাজার ২০০ মিলিমিটার থেকে ১ হাজার ৪০০ মিলিমিটার পর্যন্ত। বছরের অন্যান্য সময় বৃষ্টিপাত হলেও সব থেকে বেশি বৃষ্টিপাত বর্ষাকালেই হয়।

নদীয়া জেলার নদ-নদী

নদীয়া জেলায় একাধিক নদ নদী রয়েছে। সেগুলির মধ্যে থেকে অন্যতম হল ভাগীরথী, ইছামতি, মাথাভাঙ্গা, জলঙ্গী, ভৈরব, চূর্ণী ইত্যাদি। এই জেলায় ভাগীরথী নদীর দৈর্ঘ্য ১৮৭ কিলোমিটার। এই নদীর বদ্বীপ প্রবাহে যুক্ত হয়েছে মাথাভাঙ্গা নদী।

তারপর ভাগীরথী নদী থেকে নির্গত হয়েছে ভৈরব নদ। এই নদ ওদের জলঙ্গী নদীর সাথে মিশেছে। জলঙ্গীয়নদী নির্গত হয়েছে ভাগীরথী নদী থেকেই। এই নদীর দৈর্ঘ্য ২০৬ কিলোমিটার। যদিও বর্তমানে এখানে পলি জমেছে। জলঙ্গী নদী নদিয়া মুর্শিদাবাদ জেলার সীমান্ত বরাবর দক্ষিণ-পশ্চিম মুখে প্রবাহিত হয়েছে। এরপর নদীয়া জেলার মাঝখান দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়ে নবদ্বীপের কাছাকাছি আবার ভাগীরথী নদীর সাথেই মিলিত হয়েছে।

এইখানে ভৈরব নদ মৃতপ্রায়। এই জেলায় মাথাভাঙ্গা নদীর দৈর্ঘ্য ১৯ কিলোমিটার। এটি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তারপর আবার ভারতের প্রবেশ করে দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। এই নদীর পশ্চিম শাখাটির নাম চূর্ণী আর পূর্ব শাখাটির নাম ইছামতি।

চূর্ণী নদীর দৈর্ঘ্য ৫৩ কিলোমিটার আর ইছামতি নদীর দৈর্ঘ্য ৬৮ কিলোমিটার। এই জেলার নদীগুলি বারবার গতিপথ পরিবর্তন করে। বারবার প্রবাহ পরিবর্তনের কারণে একাধিক অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ, জলাভূমি আর বিল গড়ে উঠেছে এই জেলায়। বর্ষাকালে এই নদীগুলিতে বন্যা হয়।

নদীয়া জেলার অভয়ারণ্য

বর্তমানে এই জেলার মাত্র ১.২২ হেক্টর জমিতে বনাঞ্চল রয়েছে। যা গোটা জেলার ভৌগোলিক আয়তনের মাত্র ০.৩১ শতাংশ। এই জেলার একমাত্র অভয়ারণ্য হল বেথুয়াডহরী তে অবস্থিত। যার নাম বেথুয়াডহরী বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য।

এই অভয়ারণ্যে শাল গাছ ও মেহগনি গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও এখানে হরিণ রয়েছে। তারপর বাহাদুরপুর এর অরণ্যে প্রচুর অর্জুন ও সেগুন গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও রানাঘাটের পূর্বদিকে ৩০০ বিঘা জমির উপর পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিশাল ফরেস্ট তৈরি করেছে। এই ফরেস্টের নাম দেবগ্রাম ফরেস্ট।

এখানে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জারুল, বাঁশ, সেগুন ও হিজলশ সহ বেশ কিছু চিরহরিৎ বৃক্ষ। এই জেলায় নিম গাছ, গামার গাছ, দেবদারু গাছ, জাম গাছ ও বাবলা গাছ ইত্যাদি দেখতে পাওয়া যায়।

নদীয়া দর্শনীয় স্থান

নদীয়ায় একাধিক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। মায়াপুরের নিকটে অবস্থিত সেনরাজা বল্লাল সেনের স্মৃতি বিজড়িত ঢিবি রয়েছে। যা বল্লাল সেনের ঢিবি নামে পরিচিত। এছাড়াও মায়াপুরে রয়েছে ইসকন মন্দির। আর মায়াপুরের বামন পুকুরে রয়েছে চৈতন্য মহাপ্রভুর সমকালীন নবদ্বীপ শাসক ‘চাঁদ কাজী’ -র সমাধি।

এছাড়াও পাড় ভাঙ্গায় রয়েছে বৌদ্ধস্তূপ। যাকে পাহাড়পুর বলা হয়‌। দিগনগরে রয়েছে নদীয়া রাজ পরিবারের রাজা রাঘব রায়ের প্রতিষ্ঠিত রাঘবেশ্বর শিব মন্দির‌। বর্তমানে এটি শিবনিবাস নামে পরিচিত। নবদ্বীপে ও শান্তিপুরে রয়েছে বেশ কিছু বৈষ্ণব মন্দির। ফুলিয়ায় রয়েছে যবন হরিদাস ঠাকুরের সাধন পিঠস্থান। এই পিঠস্থান এর নাম ভজন গোফা। কাঁচরাপাড়ায় রয়েছে কৃষ্ণদেব রায় এর প্রতিষ্ঠিত আটচালা বাংলা মন্দির।

নদীয়া জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা

এই জেলায় একাধিক হাসপাতাল রয়েছে। যেমন- তেহাট্টা এসডি হাসপাতাল, বগুলা রুবেল হাসপাতাল, বিষ্ণুপুর গ্রামীন হাসপাতাল, বেথুয়াডহরী গ্রামীণ হাসপাতাল, মহেশগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতাল, যাদব দত্ত গ্রামীণ হাসপাতাল, নবদ্বীপ জেনারেল হাসপাতাল, কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতাল, শক্তিনগর হাসপাতাল ইত্যাদি।

নদীয়া জেলার শিক্ষা ব্যবস্থা

নদীয়া জেলায় একাধিক স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। যেমন- অক্ষয় বিদ্যাপীঠ গার্লস হাই স্কুল, আনন্দনগর উচ্চ বিদ্যালয়, আন্দুলপোতা মুড়াগাছা জুনিয়র হাই স্কুল, নবদ্বীপ তারাসুন্দরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, নবদ্বীপ বালিকা বিদ্যালয়, ডন বস্কো হাই স্কুল, দিগনগর উচ্চ বিদ্যালয়, দিগনগর গার্লস হাই স্কুল, ধর্মদা সুশীল বালা হিন্দু গার্লস স্কুল, ধুবুলিয়া দেশবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়, ফুলবাড়ী জুনিয়র হাই স্কুল, বামনপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়, বাহিরগাছি বাগমারা উচ্চ বিদ্যালয়, বেলপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়, ভালুকা উচ্চ বিদ্যালয়, হলি ফ্যামিলি গার্লস উচ্চ বিদ্যালয়, কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষ্ণনগর ওমেন্স কলেজ, কৃষ্ণনগর গভর্মেন্ট কলেজ, মুড়াগাছা গভর্মেন্ট কলেজ, নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজ, কৃষ্ণনগর দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কলেজ ইত্যাদি। এই জেলার সাক্ষরতার হার ৭৫.৫৮ শতাংশ।

নদীয়া জেলার পরিবহন ব্যবস্থা

এই জেলায় উন্নত সড়ক পথের পাশাপাশি রয়েছে জলপথ ও রেলপথের সুব্যবস্থা। জাতীয় সড়ক ৩৪ এই জেলা দিয়েই গেছে। হাওড়া, সহ কলকাতা ও নিউ জলপাইগুড়ির সাথে সংযোগকারী প্রধান রেলপথের মাধ্যমে নদিয়া জেলায় সহজেই প্রবেশ করা সম্ভব। এই জেলার প্রধান রেলওয়ে স্টেশন গুলি হল- নবদ্বীপ ধাম, রানাঘাট, কৃষ্ণনগর ইত্যাদি।

নদীয়া জেলার উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি

নদীয়া জেলায় প্রচুর উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব জন্মগ্রহণ ও বসবাস করেছিলেন। যেমন-
১. নদীয়া জেলার নবদ্বীপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মহাপ্রভু
২. কবি কৃত্তিবাস ওঝা, যিনি রামায়ণের প্রাচীন অনুবাদক ও কবি তিনি ও জন্মগ্রহণ করেছিলেন নদীয়া জেলাতেই।
৩. কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ ছিলেন একজন বিখ্যাত কালি সাধক। তিনিই প্রথম দক্ষিণাকালীর রূপ কল্পনা করেছিলেন।
৪. রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ ব্রাহ্ম সমাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। আর বাংলা ভাষায় প্রথম অভিধান রচনা করেছিলেন।
৫. তারাশঙ্কর তর্করত্ন ছিলেন একজন বিখ্যাত লেখক।
৬. মদনমোহন তর্কালঙ্কার ছিলেন বাংলার নবজাগরণের অন্যতম অগ্রদূত।
৭. দীনবন্ধু মিত্র ছিলেন নাট্যকার ও সাহিত্যিক।
৮. দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ছিলেন একজন কবি ও নাট্যকার।
৯. শহীদ বিশ্বনাথ সর্দার ছিলেন নীল বিদ্রোহের নেতা।
১০. নির্মল নলিনী ঘোষ ছিলেন নদীয়া জেলার প্রথম মহিলা সত্যাগ্রহী‌।
১১. যতীন্দ্র মোহন বাগচী ছিলেন একজন কবি।
১২. সরলা বালা সরকার ছিলেন একজন সাহিত্যিক।
১৩. সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন একজন বিখ্যাত অভিনেতা, কবি, আবৃত্তি শিল্পী ও অনুবাদক।

নদীয়া জেলার সাথে যুক্ত ছিলেন আরও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

নদীয়া জেলার প্রশাসনিক ব্যবস্থা

প্রশাসনিক সুবিধার জন্য নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর সদর ও রানাঘাট কে ৪ টি মহকুমায় বিভক্ত করা হয়েছে। এই জেলার সদর দপ্তর কৃষ্ণনগর। এই জেলায় ২ টি লোকসভা কেন্দ্র ও ১৭ টি বিধানসভা আসন রয়েছে। এই জেলার পৌর এলাকা ৯ লাখ ৭৯ হাজার ৫১৯।

নদীয়া জেলার প্রশ্ন উত্তর

নদীয়া জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত ?

নদীয়া জেলা তীর্থস্থান হিসেবে বিখ্যাত। মায়াপুরের ইসকন মন্দির ও নবদ্বীপ এই জেলার বিখ্যাত স্থান গুলির মধ্যে অন্যতম।

নদীয়া জেলায় কয়টি ব্লক রয়েছে ?

নদীয়া জেলায় ১৭ টি ব্লক রয়েছে।

নদীয়া জেলার মহকুমা কয়টি ?

নদীয়া জেলায় চারটি মহকুমা রয়েছে। যথা :- কৃষ্ণনগর সদর, রাণাঘাট, তেহট্ট ও কল্যাণী।

নদীয়া জেলায় কয়টি থানা আছে ?

নদীয়া জেলায় ২২ টি থানা আছে।

নদীয়া জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা –

এই জেলায় একাধিক হাসপাতাল রয়েছে। যেমন- তেহাট্টা এসডি হাসপাতাল, বগুলা রুবেল হাসপাতাল, বিষ্ণুপুর গ্রামীন হাসপাতাল, বেথুয়াডহরী গ্রামীণ হাসপাতাল, মহেশগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতাল, যাদব দত্ত গ্রামীণ হাসপাতাল, নবদ্বীপ জেনারেল হাসপাতাল, কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতাল, শক্তিনগর হাসপাতাল ইত্যাদি।

নদীয়া জেলার প্রধান নদী

নদীয়া জেলার প্রধান নদী ভাগীরথী।

নদীয়া জেলায় সবথেকে বেশি ব্যবহৃত ভাষা কী ?

এই জেলায় সবথেকে বেশি বাংলা ভাষা ব্যবহৃত হয়।

নদীয়া জেলার পৌরসভা কয়টি ?

নদীয়া জেলায় ১০ টি পৌরসভা আছে।

উপসংহার :

নদীয়া জেলার পূর্ব নাম নবদ্বীপ জেলা। এটি পশ্চিমবঙ্গের প্রেসিডেন্সি বিভাগের অন্যতম একটি জেলা। এই জেলার নাম নিয়ে নানা ধারণা শুনতে পাওয়া যায়। নদীয়ার নামকরণের প্রসঙ্গে কান্তিচন্দ্র রাঢ়ী লিখেছেন,

” ভাগীরথী তীর্থ নবসৃষ্ট চর ভূমিতে এক তান্ত্রিক প্রতিদিন সন্ধ্যায় ন’টি দিয়া জ্বালিয়া তন্ত্র সাধনা করতেন। দূর থেকে দেখে লোকে এই দ্বীপটিকে ন’দীয়ার চর বলত। আর সেই থেকেই নাকি লোকমুখে নাকি নদীয়া নামের প্রচলন প্রচলন হয়। ”

নদীয়া জেলা ভাগীরথী নদীর তীরে অবস্থিত। নদীয়া জেলার নবদ্বীপ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে তীর্থস্থান। শোনা যায় রাজা বল্লাল সেন নদিয়া প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। নদীয়ায় একাধিক দর্শনীয় স্থান রয়েছে।

এই জেলার মাঝখান দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা চলে যাওয়ার কারণে গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড গরম পড়ে। ২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই জেলায় প্রায় ৫১ লাখ ৬৮ হাজার ৪৮৮ জন মানুষ বসবাস করেন। পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জেলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করতে পারেন‌।

Leave a Comment