কলকাতা জেলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ

পশ্চিমবঙ্গের ২৩ টি জেলার মধ্যে থেকে অন্যতম হল কলকাতা। এটি পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী আর বৃহত্তম শহর। এই শহর হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত। পূর্ব ভারতের শিক্ষা, সংস্কৃতি আর অর্থনীতির মেলবন্ধন ঘটেছে এই শহরে।

দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শহর হল কলকাতা। ভারতের প্রাচীনতম বিমানবন্দর গুলির মধ্যে থেকে অন্যতম হল কলকাতা বিমানবন্দর। সুতানুটি, ডিহি কলিকাতা আর গোবিন্দপুর -এই ৩ টি গ্রাম নিয়েই মূল কলকাতা শহর গড়ে উঠেছে।

সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত এই গ্রামগুলির শাসনভার ছিল বাংলার নবাবদের ওপর। এরপর ১৬৯০ সাল নাগাদ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সেই ক্ষমতা লাভ করে। তারপরই মূলত কলকাতায় দুর্গ বেষ্টিত বাণিজ্য কুঠি কলকাতায় গড়ে তোলা হয়েছিল। কলকাতা সে সময় ছিল ব্রিটিশ অধিকৃত অঞ্চলগুলির রাজধানী।

তবে শহর কলকাতা থেকেই স্বাধীনতা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। এখানেই সেই সময় স্বদেশী আন্দোলনের মিটিং হত। তবে স্বাধীনতার পর গোটা দেশের দায়ভার সামলানোর জন্য কলকাতায় বেশ কিছু অসুবিধা দেখা দিচ্ছিল। এই কারণেই দেশের রাজধানী স্থানান্তরিত করা হয় তৎকালীন দিল্লিতে। তবে কলকাতা যে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য আর রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র তা কখনওই নাকচ করা যায় না।

ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত কলকাতা ভারতীয় শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি আর বিজ্ঞান চর্চার প্রাণকেন্দ্র হয়ে রয়েছে। ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগ পর্যন্ত বাংলায় নবজাগরণ শুরু হয়েছিল। আর সেই সময় কলকাতাই ছিল এর কেন্দ্রস্থল।

কলকাতায় রয়েছে ধর্ম, বর্ণ ও জাতির বৈচিত্র। সাহিত্য থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র সবকিছুর ঐতিহ্য একা হাতে বহন করে চলেছে শহর কলকাতা। এই জেলার সম্পর্কেই আজ বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

কলকাতা জেলার ইতিহাস

প্রত্নতাত্ত্বিক মতামত অনুযায়ী শহর কলকাতা ২ হাজার বছরের বেশি সময় ধরে জনবসতিপূর্ণ। মধ্যযুগের বেশ কিছু সাহিত্যিক নিদর্শনে হুগলি নদীর তীরবর্তী এই শহরকে ‘গ্রাম’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। ১৬৯০ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার মসনদে বাণিজ্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে কলকাতায় পদার্পণ করেছিল।

এরপর থেকেই কলকাতার সম্বন্ধে লিখিত ইতিহাসের সূচনা হয়। তবে বেশ কিছু সাম্রাজ্যবাদী ঐতিহাসিক জব চার্নক নামক একজন প্রশাসককে কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা মনে করতেন। এই নিয়ে ২০০৩ সালে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। কলকাতা হাইকোর্টের তরফ থেকে এই মামলার রায় -এ জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে অভিহিত করা যাবে না।

বিপ্রদাস পিপলাইয়ের ‘মনসা বিজয়’ কাব্যে কলকাতার উল্লেখ পাওয়া যায়। এছাড়াও মুকুন্দরাম চক্রবর্তী ‘চন্ডীমঙ্গল’ কাব্য, কৃষ্ণরাম দাসের ‘কালিকামঙ্গল’, সনাতন ঘোষালের ‘ভাষা ভাগবত’, সৈয়দ আলাওলের ‘পদ্মাবতী’, কৃষ্ণ দাসের ‘নারদ পুরাণ’ প্রভৃতি গ্রন্থে ‘কলিকাতা গ্রাম’ এর উল্লেখ রয়েছে। আবুল ফজলের ‘আইন-ই-আকবরী’ গ্রন্থে ‘কলিকাতা গ্রাম’ -এর উল্লেখ রয়েছে।

সুতানুটি, ডিহি কলিকাতা আর গোবিন্দপুর নামে তিনটি গ্রাম ছিল। এই ৩ টি গ্রামের শাসনভার মুঘল সম্রাটেরা সামলাতেন। সেই সময় ফরাসি, পর্তুগিজ আর ওলন্দাজ শক্তি বারবার আক্রমণ করত। ব্রিটিশ ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় আসার পর গোবিন্দপুরে একটি দুর্গ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। ১৭০২ সাল‌ নাগাদ সেই দুর্গের কাজ শেষ হয়েছিল।

এরপর কলকাতা ‘প্রেসিডেন্সি সিটি’ হিসেবে ঘোষিত হয়। পরবর্তী সময়ে এই শহরকেই বাংলা প্রেসিডেন্সির সদর বানানো হয়। ১৭৭২ সালে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী হিসেবে কলকাতা শহরকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। অবশ্য ১৮৬৪ সাল থেকে উত্তরাখণ্ডের শৈল শহর সিমলায় গ্রীষ্মকালে সাময়িকভাবে রাজধানী স্থানান্তরিত করার রীতি শুরু হয়েছিল।

অষ্টাদশ শতাব্দী ও উনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কলকাতাতেই আফিম -এর ব্যবসা শুরু করেছিল। এরপর ঊনবিংশ শতাব্দীতে কলকাতা শহর ২ টি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। শহরের উত্তরে ভারতীয়রা বসবাস করতেন। ওই অংশটি -কে বলা হত ‘ব্ল্যাক টাউন’। আর শহরের দক্ষিণ দিকে বসবাস করতেন ব্রিটিশরা। ওই অংশটি -কে বলা হত ‘হোয়াইট টাউন’।

এরপর ব্রিটিশ সংস্কৃতি আর ভারতীয় সংস্কৃতির মিশ্রণে কলকাতায় উদ্ভব হয়ে ‘নব্য বাবু’ শ্রেণীর। এঁরা ছিলেন উচ্চ বর্ণীয় হিন্দু। কিন্তু তাঁদের শিক্ষা আর সংস্কৃতি ছিল ব্রিটিশ রীতি অনুযায়ী। তাঁরা নিয়মিত ইংরেজি সংবাদপত্র পড়তেন।

পেশার দিক থেকে তাঁরা ছিলেন সরকারি কর্মচারী অথবা শিক্ষক অথবা জমিদার। তবে নবজাগরণের সময় থেকে বাঙালির চিন্তায় আর রুচিতে আমূল পরিবর্তন ঘটেছিল। এক্ষেত্রে কলকাতা শহরের ভুমিকা ছিল অনস্বীকার্য। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি গোটা ভারতের পথপ্রদর্শক ছিল কলকাতা শহর।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ক্ষেত্রেও কলকাতাই ছিল কেন্দ্রস্থল। স্বাধীনতার পর রাজনীতির মিলন ক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল কলকাতা।

কলকাতা জেলার অবস্থান

কলকাতা ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের পূর্ব দিকে ২২° ৩৪’ উত্তর অক্ষাংশে আর ৮৮° ২১’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। হুগলি নদীর পার বরাবর এই শহরের বিস্তার। এক সময় এই শহরের বেশিরভাগ অংশই জলা জমি ছিল।

তবে কলকাতায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সেই সব জলা জমি ভরাট করে বসবাসযোগ্য করে তোলা হয়। এরপর যে সমস্ত জলা জমি অবশিষ্ট ছিল সেগুলিকে ‘পূর্ব কলকাতা জলাভূমি’ বলা হত। বর্তমানে রামসার কনভেনশন অনুযায়ী ‘আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে এগুলিকে।

কলকাতার মাটি আর জল পলিজ প্রকৃতির। আসলে কলকাতা হুগলি নদীর তীরে গড়ে ওঠার কারণেই এমন হয়েছে। রাষ্ট্রসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির একটি রিপোর্ট অনুযায়ী বায়ু প্রবাহ আর ঘূর্ণিঝড়ের দিক থেকে কলকাতা আসলে অতি উচ্চ ক্ষয় ক্ষতি প্রবন এলাকা।

কলকাতা জেলার জনসংখ্যা

২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী কলকাতা পৌর সংস্থার জনসংখ্যা ৪ লক্ষ ৮৬ হাজার ৬৭৯ জন। তবে কলকাতা মহানগর এর মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ৪১ লক্ষ ১২ হাজার ৫৩৬ জন। এই শহরের লিঙ্গ অনুপাত হল ১০০০ : ৯৯৯ (পুরুষ : মহিলা)।

পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য এলাকার পুরুষেরা নিজের পরিবারের মহিলাদের গ্রামে রেখে শহরে কাজ করতে আসার কারণে কলকাতা মহানগরীর লিঙ্গানুপাত এমন ধরনের।

কলকাতা জেলার ভূপ্রকৃতি

কলকাতার মাটি আর জল পলিজ প্রকৃতির। আসলে কলকাতা হুগলি নদীর তীরে গড়ে ওঠার কারণেই এমন হয়েছে। রাষ্ট্রসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির একটি রিপোর্ট অনুযায়ী বায়ু প্রবাহ আর ঘূর্ণিঝড়ের দিক থেকে কলকাতা আসলে অতি উচ্চ ক্ষয় ক্ষতি প্রবন এলাকা।

কলকাতা জেলা নিম্ন গাঙ্গেয় বদ্বীপের অন্তর্ভুক্ত হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত। এক সময় এই শহরের বেশিরভাগ অংশই জলা জমি ছিল। তবে কলকাতায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সেই সব জলা জমি ভরাট করে বসবাসযোগ্য করে তোলা হয়।

এরপর যে সমস্ত জলা জমি অবশিষ্ট ছিল সেগুলিকে ‘পূর্ব কলকাতা জলাভূমি’ বলা হত। বর্তমানে রামসার কনভেনশন অনুযায়ী ‘আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে এগুলিকে।

কলকাতা জেলার জলবায়ু

কলকাতা জেলার জলবায়ু গ্রীষ্ম প্রকৃতির। এখানকার আবহাওয়া আর্দ্র ও শুষ্ক। কোলকাতার রেকর্ড অনুযায়ী সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৩.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই জেলার বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে।

আর সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে। দক্ষিণ পশ্চিম গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী বায়ুর জেরে এই জেলায় বৃষ্টিপাত হয়। এই জেলার বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১ হাজার ৮৫০ মিলিমিটার। বহুবার কোলকাতায় ঘূর্ণিঝড় এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে।

কলকাতা জেলার নদ-নদী

কোলকাতা গঙ্গা নদীর শাখা নদী হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত। সিন্ধু গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের অন্তর্গত এই জেলা।

কলকাতা জেলার আয়তন

আয়তনের দিক থেকে কলকাতা পশ্চিমবঙ্গের সবথেকে ছোট জেলা। এর মোট আয়তন ১৮৫ বর্গ কিলোমিটার। এর উত্তর রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা আর দক্ষিণে রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা। পশ্চিম দিকে রয়েছে হুগলি নদী ও হাওড়া জেলা।

কলকাতা জেলার দর্শনীয় স্থান

পর্যটকদের আকর্ষণ করার মত বহু জায়গা রয়েছে কলকাতায়। দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা কলকাতার সৌন্দর্য ও সংস্কৃতি উপভোগ করতে আসেন। এখানকার বিখ্যাত কয়েকটি দর্শনীয় স্থান হল-

১. বিদ্যাসাগর সেতু :- হুগলি নদীর উপরে অবস্থিত হল বিদ্যাসাগর সেতু। এটি ভারত ও সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম ও উচ্চতম ঝুলন্ত সেতুগুলির মধ্যে থেকে অন্যতম। এই সেতুর মাধ্যমে হাওড়া আর কলকাতার সংযোগ রক্ষা হয়।

২. আলিপুর চিড়িয়াখানা :- কলকাতার বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র গুলির মধ্য থেকে অন্যতম হল আলিপুর চিড়িয়াখানা। এটি ৪৫ একর জমির উপর তৈরি।

৩. হাওড়া ব্রিজ :- হাওড়া ব্রিজ দেখতে পশ্চিমবঙ্গ সহ অন্যান্য রাজ্য ও দেশের মানুষেরা ভীড় জমায়।

এছাড়াও এই জেলায় রয়েছে – ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, কালীঘাট মন্দির, রবীন্দ্র সদন, জাতীয় গ্রন্থাগার, ইডেন গার্ডেন, নন্দন, রাজভবন প্রভৃতি।

কলকাতা জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা

কলকাতায় বিভিন্ন রাজ্য ও শহরের মানুষেরা চিকিৎসা করাতে আসেন। শুধুমাত্র ভারতের মানুষেরাই নয় বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে প্রতিদিন বহু মানুষ কলকাতায় আসেন শুধুমাত্র চিকিৎসার জন্য।

এই জেলার কয়েকটি বিখ্যাত স্বাস্থ্য কেন্দ্র হল- মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল, এ এম আর আই হসপিটাল, মণিপাল হাসপাতাল, এন আর এস হাসপাতাল, আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ইত্যাদি।

কলকাতা জেলার শিক্ষা ব্যবস্থা

এই জেলার সাক্ষরতার হার ৯৮.৬৭ শতাংশ। এই জেলার কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হল- যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, বেথুন কলেজ, আশুতোষ কলেজ, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, কলকাতা মেডিকেল কলেজ, কলকাতা ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউ, সিটি কলেজ, আলিয়া ইউনিভার্সিটি ইত্যাদি।

কলকাতা জেলার পরিবহন ব্যবস্থা

পরিবহনের দিক থেকে কলকাতার ব্যবস্থাপনা অনেকটাই উন্নত। এখানে যেমন উন্নত সড়ক পথ রয়েছে, ঠিক তেমনভাবেই রয়েছে আকাশ পথ, রেল পথ ও মেট্রো পথের মাধ্যমে যাতায়াতের সুবন্দোবস্ত।

অত্যাধুনিক সমস্ত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এই জেলায়। এখানকার কয়েকটি বিখ্যাত রেল স্টেশন হল – বালিগঞ্জ জংশন, দমদম জংশন, কলকাতা রেলস্টেশন, শিয়ালদা রেল স্টেশন ইত্যাদি। এছাড়াও একাধিক মেট্রো স্টেশন তো রয়েছেই। এখানকার বিমানবন্দর হল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

কলকাতা জেলার উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি

এই জেলার সাথে সম্পর্ক রয়েছে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের। যেমন-

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর :- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আলাদা করে কোনও পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তা সত্ত্বেও বলে রাখা ভালো তিনি ছিলেন একজন বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, ছোট গল্পকার, কন্ঠ শিল্পী, দার্শনিক, প্রাবন্ধীক, সঙ্গীত স্রষ্টা, নাট্যকার, অভিনেতা, লেখক ইত্যাদি।

সুকুমার রায় :- তিনি ছিলেন একজন শিশু সাহিত্যিক।

স্বামী বিবেকানন্দ :- একজন সন্ন্যাসী। তিনি ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বেদান্ত আর জোক দর্শনের প্রচার করেছিলেন। রামকৃষ্ণ মিশন ও রামকৃষ্ণ মঠের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি।

সত্যজিৎ রায় :- তিনি ছিলেন একজন অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা। এছাড়াও তিনি ছিলেন শিল্প নির্দেশক, লেখক, চিত্রনাট্যকার ও সংগীত পরিচালক।

এছাড়াও আরও একজন বিখ্যাত ব্যক্তি হলেন – স্বামী অখন্ডানন্দ, অতুল কৃষ্ণ গোস্বামী, মাদার টেরিজা, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, অধ্যাপক সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, অভয়চরণাবৃন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ, অক্ষয় কুমার বড়াল, জগদীশচন্দ্র বসু, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, রমেশ চন্দ্র মজুমদার, দীনবন্ধু মিত্র, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ, রামমোহন রায়, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী প্রমূখ।

কলকাতা জেলার প্রশাসনিক ব্যবস্থা

পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী হল কলকাতা শহর। আর কলকাতা জেলার সদর শহর হল কলকাতা শহর। এই জেলার কোন মহকুমা নেই। এই জেলায় মোট ২ টি লোকসভা কেন্দ্র রয়েছে। একটি হল উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্র আর দ্বিতীয়টি হল দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্র।

এই জেলায় ১১ টি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে। যথা :- রাসবিহারী বিধানসভা কেন্দ্র, জোড়াসাঁকো বিধানসভা কেন্দ্র, চৌরঙ্গী বিধানসভা কেন্দ্র, বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র, শ্যামপুকুর বিধানসভা কেন্দ্র, বেলেঘাটা বিধানসভা কেন্দ্র, কলকাতা বন্দর বিধানসভা কেন্দ্র, ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্র, এন্টালি বিধানসভা কেন্দ্র, মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্র, কাশিপুর বেলগাছিয়া বিধানসভা কেন্দ্র।

কলকাতা জেলার প্রশ্ন উত্তর

কলকাতা কিসের জন্য বিখ্যাত ?

উঃ কলকাতা হাওড়া ব্রিজ ও রসগোল্লার জন্য বিখ্যাত।

কলকাতা জেলার সদর শহর কী ?

উঃ এই জেলার সদর শহর হল কলকাতা শহর।

কলকাতা জেলার মহকুমা কয়টি ?

উঃ এই জেলার কোন মহকুমা নেই। এটিই পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র জেলা যার কোন মহাকুমা নেই।

কলকাতা জেলায় কয়টি লোকসভা কেন্দ্র আছে ?

উঃ এই জেলায় ১১ টি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে। যথা :- রাসবিহারী বিধানসভা কেন্দ্র, জোড়াসাঁকো বিধানসভা কেন্দ্র, চৌরঙ্গী বিধানসভা কেন্দ্র, বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র, শ্যামপুকুর বিধানসভা কেন্দ্র, বেলেঘাটা বিধানসভা কেন্দ্র, কলকাতা বন্দর বিধানসভা কেন্দ্র, ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্র, এন্টালি বিধানসভা কেন্দ্র, মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্র, কাশিপুর বেলগাছিয়া বিধানসভা কেন্দ্র।

কলকাতা জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে লেখ।

উঃ কলকাতায় বিভিন্ন রাজ্য ও শহরের মানুষেরা চিকিৎসা করাতে আসেন। শুধুমাত্র ভারতের মানুষেরাই নয় বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে প্রতিদিন বহু মানুষ কলকাতায় আসেন শুধুমাত্র চিকিৎসার জন্য। এই জেলার কয়েকটি বিখ্যাত স্বাস্থ্য কেন্দ্র হল- মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল, এ এম আর আই হসপিটাল, মণিপাল হাসপাতাল, এন আর এস হাসপাতাল, আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ইত্যাদি।

কলকাতা জেলার প্রধান নদী কোনটি ?

উঃ এই জেলার প্রধান নদী হল হুগলি।

কলকাতা জেলার চিড়িয়াখানার নাম কী ?

উঃ এই জেলার চিড়িয়াখানার নাম হল আলিপুর চিড়িয়াখানা।

কলকাতা জেলার প্রতিষ্ঠাতা কে ?

উঃ বেশ কিছু সাম্রাজ্যবাদী ঐতিহাসিক জব চার্নক নামক একজন প্রশাসককে কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা মনে করতেন।

এই নিয়ে ২০০৩ সালে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। কলকাতা হাইকোর্টের তরফ থেকে এই মামলার রায় -এ জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে অভিহিত করা যাবে না।

উপসংহার

পশ্চিমবঙ্গের ২৩ টি জেলার মধ্যে থেকে অন্যতম হল কলকাতা। এটি পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী আর বৃহত্তম শহর। এই শহর হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত। পূর্ব ভারতের শিক্ষা, সংস্কৃতি আর অর্থনীতির মেলবন্ধন ঘটেছে এই শহরে।

দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শহর হল কলকাতা। বিপ্রদাস পিপলাইয়ের ‘মনসা বিজয়’ কাব্যে কলকাতার উল্লেখ পাওয়া যায়। এছাড়াও মুকুন্দরাম চক্রবর্তী ‘চন্ডীমঙ্গল’ কাব্য, কৃষ্ণরাম দাসের ‘কালিকামঙ্গল’, সনাতন ঘোষালের ‘ভাষা ভাগবত’, সৈয়দ আলাওলের ‘পদ্মাবতী’, কৃষ্ণ দাসের ‘নারদ পুরাণ’ প্রভৃতি গ্রন্থে ‘কলিকাতা গ্রাম’ এর উল্লেখ রয়েছে। আবুল ফজলের ‘আইন-ই-আকবরী’ গ্রন্থে ‘কলিকাতা গ্রাম’ -এর উল্লেখ রয়েছে।

Leave a Comment