পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর বিভাগের অন্তর্গত একটি জেলা হল ঝাড়গ্রাম। ২০১৭ সালের ৪ ঠা এপ্রিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অন্তর্গত ঝাড়গ্রাম মহকুমাকে নিয়ে গঠিত হয়েছিল এই জেলা। এটি পশ্চিমবঙ্গের ২২ তম জেলা। এই জেলার সদর দপ্তর হল ঝাড়গ্রাম। এই জেলার আয়তন ৩০২৪.৩৮ বর্গ কিলোমিটার।
ঝাড়গ্রাম জেলার সংস্কৃতি
এই জেলা উপজাতীয় নৃত্যের জন্য বিখ্যাত। এই জেলাতে বাংলার সকল প্রাচীনতম নৃত্য আর সংগীতের ধারা বজায় রয়েছে। অবশ্য কিছু কিছু উপজাতি নৃত্য এখন বিলুপ্তির পথে। তবে ছৌ, ঝুমুর, পরব, পাতা, চ্যাং, ভুয়াং প্রভৃতি নৃত্য এখনও এই অঞ্চলকে সমৃদ্ধ করে চলেছে। এছাড়াও বাংলার লোকসংগীত যেমন – ভাদু গান, টুসু গান, ঝুমুর গান ও শারুল গান এই অঞ্চলে শুনতে পাওয়া যায়। লোকসংগীত ও নৃত্যের পাশাপাশি এই জেলার সংস্কৃতি হল মকর পরব, পাহাড় পুজো আর গরম উৎসব। এখানে বিজয়া দশমীর পরের দিন আদিবাসী মেলা বসে।
ঝাড়গ্রাম জেলার অবস্থান
এই জেলার ভূমি ভাগ পশ্চিম দিকে পূর্ব দিকে ঢালু। আবার এই জেলার উত্তর-পশ্চিম দিকে পাহাড়ি ভূমি ভাগ দেখা যায়।
ঝাড়গ্রাম জেলার জনসংখ্যা
২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী এই জেলার মোট জনসংখ্যা ১১ লাখ ৩৬ হাজার ৫৪৮ জন। এই জেলার প্রায় ৯৬.৫২ শতাংশ মানুষ গ্রামে বসবাস করেন। আর মোট জনসংখ্যার মাত্র ৩.৪৮ শতাংশ মানুষ বসবাস করেন শহরে। ঝাড়গ্রাম জেলার ২০.১১ শতাংশ মানুষ তপশিলি সম্প্রদায়ের অন্তর্গত। আর ২৯.৩৭ শতাংশ মানুষ তপশিলি উপজাতি জনগোষ্ঠীর অন্তর্গত।
ঝাড়গ্রাম জেলার ভূপ্রকৃতি
ঝাড়গ্রাম জেলা ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলের অন্তর্গত। এটি ছোটনাগপুর মালভূমির পশ্চিমাংশে অবস্থিত। এখানে ল্যাটেরাইট মাটি দেখতে পাওয়া যায়। এখানকার এলাকা খরা প্রবণ। এই জেলার ভূমিভাগে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে মৃদু ঢালু দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও উত্তর-পশ্চিম দিকে রয়েছে পাহাড়ি ভূখণ্ড।
ঝাড়গ্রাম জেলার জলবায়ু
এই জেলার সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা থাকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর আশেপাশে আর সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা থাকে ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের আশেপাশে। এই জেলায় সবথেকে বেশি বৃষ্টিপাত বর্ষাকালে হয়। ঝাড়গ্রাম এর গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত হল ১ হাজার ৪০০ মিলিমিটার। জুলাই-আগস্ট মাস নাগাদ এই অঞ্চলের সব থেকে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পেতে থাকে শীতকালের শেষ দিক থেকে।
ঝাড়গ্রাম জেলার নদ-নদী
এই জেলের উত্তরে কাকড়াঝোড় নদী বয়ে চলেছে। আর দক্ষিণ দিকে বয়ে চলেছে সুবর্ণরেখা নদী।
ঝাড়গ্রাম জেলার অভয়ারণ্য
এই অঞ্চল অরণ্যের জন্য বিখ্যাত। ঝাড়গ্রাম জেলাকে অরণ্য সুন্দরী বলা হয়। এই জেলার দক্ষিণ দিকে রয়েছে গোপীবল্লভপুর আর বেলপাহাড়ি। এই বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে জঙ্গল রয়েছে। এই জেলায় হাতি দেখতে পাওয়া যায়।
ঝাড়গ্রাম জেলার দর্শনীয় স্থান
আগেই বলা হয়েছে এই জেলাকে অরণ্য সুন্দরী বলা হয়। শুধুমাত্র অরণ্য নয়, এই জেলায় রয়েছে জলপ্রপাত, নদী, নীলকুঠি, রাজবাড়ী, শিল্পী গ্রাম, লেক ইত্যাদি। সাপ্তাহিক ছুটি কাটানোর জন্য এই অঞ্চল যথাযথ। এছাড়াও রয়েছে কনক দুর্গা মন্দির, ঝাড়গ্রাম মিনি জু, খোয়াব গা, শিলদা রাজবাড়ী, কেটকি ঝর্ণা, মাকুর ভোলা জলপ্রপাত, শ্বেত পাথরের পাহাড়, চাতন পাহাড়, রঙিন পাহাড়, ট্রাইবাল মিউজিয়াম, সাবিত্রী মন্দির, হুদহুদ জলপ্রপাত ইত্যাদি।
ঝাড়গ্রাম জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা
এই জেলায় বেশ কিছু স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। যেমন – গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, চিল্কিগড় গ্রামীণ হাসপাতাল, ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, তপসিয়া গ্রামীণ হাসপাতাল, নয়াগ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, বিনপুর গ্রামীন হাসপাতাল, বেলপাহাড়ি গ্রামীণ হাসপাতাল, ভাঙাগড় গ্রামীণ হাসপাতাল ইত্যাদি।
ঝাড়গ্রাম জেলার শিক্ষা ব্যবস্থা
এই জেলার শিক্ষা ব্যবস্থা বেশ উন্নত। এখানে রয়েছে ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর পলিটেকনিক, কাপগারি সেবা ভারতী মহাবিদ্যালয়, ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজ, ঝাড়গ্রাম সরকারি শিল্প প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, বিবেকানন্দ শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়, লালগড় সরকারি কলেজ, শিলদা চন্দ্রশেখর কলেজ, সুবর্ণরেখা মহাবিদ্যালয়, ঝাড়গ্রাম কুমুতকুমারী ইনস্টিটিউশন, অশোক বিদ্যাপীঠ উচ্চ বিদ্যালয়, ঝাড়গ্রাম ননীবালা বিদ্যালয়, ঝাড়গ্রাম ননীবালা বালিকা বিদ্যালয়, ঝাড়গ্রাম বাণীতীর্থ উচ্চ বিদ্যালয় ইত্যাদি।
ঝাড়গ্রাম জেলার পরিবহন ব্যবস্থা
ঝাড়গ্রাম জেলা বিভিন্ন মহাসড়কের সাথে যুক্ত। এই জেলাতে রয়েছে ‘এ এইচ ৪৬’। এই সড়ক এশিয়ান হাইওয়ের অন্তর্গত। সড়কপথে ঝাড়গ্রাম থেকে খুব সহজেই মেদিনীপুর, খড়গপুর, দুর্গাপুর, আসানসোল, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, হলদিয়া, দীঘা, টাটানগর ইত্যাদি জায়গায় যাওয়া যায়।
ঝাড়গ্রাম জেলার অর্থনীতি
ঝাড়গ্রাম জেলার অর্থনীতি বর্তমানে নির্ভর করছে পর্যটনের ওপর। এছাড়াও রয়েছে ব্যবসা, চাষাবাদ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের শিল্প। এখানকার বেশ কিছু মানুষ সরকারি কর্মচারী। আবার অনেকে বেসরকারি চাকরিও করেন। এখানে বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্প দেখতে পাওয়া যায়। তাছাড়া এখানকার জঙ্গল থেকে পাওয়া শাল পাতা, বিড়ির পাতা, বন ঔষধ, ধুপ ধুনো, শাল ফুল, কুসুম ফুল প্রভৃতির মাধ্যমে মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে।
ঝাড়গ্রাম জেলার প্রশাসনিক ব্যবস্থা
ঝাড়গ্রাম জেলার সদর দপ্তর হল ঝাড়গ্রাম। এটি মেদিনীপুর প্রশাসনিক বিভাগের অন্তর্গত। এখানকার লোকসভা কেন্দ্র ১ টি। যথা – ঝাড়গ্রাম। আর বিধানসভা আসন ৪ টি। যথা – গোপীবল্লভপুর, বিনপুর, ঝাড়গ্রাম ও নয়াগ্রাম।
এই জেলায় ১০ টি থানা আর ১ টি জনগণনা নগর রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ৮ টি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক, ৮ টি পঞ্চায়েত সমিতি, ১ টি পৌরসভা, ২ হাজার ৯৯৬ টি মৌজা, ৭৯ টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ২ হাজার ৫১৩ টি গ্রাম ইত্যাদি। এই জেলার পৌরসভা হলো জেলা সদর ঝাড়গ্রাম। আর জনগণনা নগর হলো শিলদা।
ঝাড়গ্রাম জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত ?
উঃ ঝাড়গ্রাম জেলা পর্যটনের জন্য বিখ্যাত।
ঝাড়গ্রাম জেলায় কয়টি ব্লক রয়েছে ?
উঃ এই জেলায় আটটি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক রয়েছে।
ঝাড়গ্রাম জেলার জনগণনা নগর কয়টি ?
উঃ এই জেলায় ১ টি জনগণনা নগর রয়েছে।
ঝাড়গ্রাম জেলায় কয়টি থানা আছে ?
উঃ ঝাড়গ্রাম জেলায় রয়েছে ১০ টি থানা।
ঝাড়গ্রাম জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে লেখ।
উঃ এই জেলায় বেশ কিছু স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। যেমন – গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, চিল্কিগড় গ্রামীণ হাসপাতাল, ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, তপসিয়া গ্রামীণ হাসপাতাল, নয়াগ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, বিনপুর গ্রামীন হাসপাতাল, বেলপাহাড়ি গ্রামীণ হাসপাতাল, ভাঙাগড় গ্রামীণ হাসপাতাল ইত্যাদি।
ঝাড়গ্রাম জেলার প্রধান নদী কোনটি ?
উঃ ঝাড়গ্রাম জেলার প্রধান নদী হল সুবর্ণরেখা।
ঝাড়গ্রাম জেলার পাহাড় সম্পর্কে লেখ।
উঃ এই জেলায় পাহাড়ি ভূখণ্ড দেখা যায়। এখানকার সর্বোচ্চ পাহাড় হলো বড় পাহাড়। এই পাহাড়ের উচ্চতা ৩৭০ মিটার।
ঝাড়গ্রাম জেলার পৌরসভা কয়টি ?
উঃ এই জেলায় একটি মাত্র পৌরসভা রয়েছে।
উপসংহার :
২০১৭ সালের ৪ ঠা এপ্রিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অন্তর্গত ঝাড়গ্রাম মহকুমাকে নিয়ে গঠিত হয়েছিল এই জেলা। এটি পশ্চিমবঙ্গের ২২ তম জেলা। এই জেলা উপজাতীয় নৃত্যের জন্য বিখ্যাত। এই জেলাতে বাংলার সকল প্রাচীনতম নৃত্য আর সংগীতের ধারা বজায় রয়েছে। অবশ্য কিছু কিছু উপজাতি নৃত্য এখন বিলুপ্তির পথে। তবে ছৌ, ঝুমুর, পরব, পাতা, চ্যাং, ভুয়াং প্রভৃতি নৃত্য এখনও এই অঞ্চলকে সমৃদ্ধ করে চলেছে। এই জেলায় পাহাড়ি ভূখণ্ড দেখা যায়। এখানকার সর্বোচ্চ পাহাড় হলো বড় পাহাড়। এই পাহাড়ের উচ্চতা ৩৭০ মিটার। ঝাড়গ্রাম জেলার অর্থনীতি বর্তমানে নির্ভর করছে পর্যটনের ওপর। এছাড়াও রয়েছে ব্যবসা, চাষাবাদ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের শিল্প।